রাশিয়ার অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা করেছে ইউক্রেন। কিয়েভের সামরিক ইতিহাসে সবচেয়ে সাহসী ড্রোন হামলা হিসেবে এটিকে বর্ণনা করা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, রাশিয়ায় আরেকটি পার্ল হারবার ঘটে গেছে। বিপুল যুদ্ধবিমান খুঁইয়ে বড় বিপদে রাশিয়া। তেমনি বদলে যেতে পারে ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের আক্রমণের নকশাও।
দ্য টেলিগ্রাফসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, রোববার (১লা-জুন) হামলাটি হলেও রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ তা চেপে রাখে। কিন্তু উচ্চ-রেজোলিউশনের স্যাটেলাইট চিত্রে ক্ষয়ক্ষতি ধরা পড়েছে।
ছবিতে দেখা গেছে, রাশিয়ান বিমান বাহিনীর বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান পার্ক করা। এর মধ্যে রয়েছে কৌশলগত বোমারু বিমান, পরিবহন বিমান এবং আকাশ প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত অত্যাধুনিক সব বিমান। ইউক্রেনের হামলার পর তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
ইউক্রেন ‘অপারেশন স্পাইডার ওয়েব’ নামে এ হামলা চালায়। রাশিয়ার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে পাঁচটি রাশিয়ান বিমান ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে। এই ঘাঁটিগুলোর মধ্যে কিছু রাশিয়ার অভ্যন্তরে শত শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর সবচেয়ে দূরবর্তী ঘাঁটিটি রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্ত থেকে প্রায় ৮,০০০-কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ইউক্রেন যে বিমান ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করেছিল, সেগুলো হলো
-সাইবেরিয়ার ইরকুৎস্কে অবস্থিত বেলায়া এয়ার বেস, সীমান্ত থেকে ৪,৫০০-কিলোমিটারের বেশি দূরে।
-আর্কটিক অঞ্চলের মুরমানস্কে অবস্থিত ওলেনিয়া এয়ার বেস, সীমান্ত থেকে ২,০০০-কিলোমিটারের বেশি দূরে।
-ইভানোভোতে অবস্থিত ইভানোভো সেভার্নি এয়ার বেস, সীমান্ত থেকে ৮০০-কিলোমিটারের বেশি দূরে।
-রিয়াজানে অবস্থিত দ্যাগিলেভো এয়ার বেস, সীমান্ত থেকে ৫২০-কিলোমিটারের বেশি দূরে।
-রাশিয়ার সুদূর পূর্বে অবস্থিত উক্রাইনকা এয়ার বেস, সীমান্ত থেকে ৮,০০০-কিলোমিটারের বেশি দূরে।
এই পাঁচটি বিমান ঘাঁটির প্রত্যেকটিতে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। সম্ভবত ড্রোন হামলা থেকে এই সামরিক জেটগুলোকে রক্ষা করার তুমুল চেষ্টা করা হয়, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
বেলায়া বিমান ঘাঁটিতে হামলার আগের একটি চিত্রে দেখা যায়, রাশিয়ান বিমান বাহিনীর প্রধান শক্তি তু-১৬০ বিমান পার্ক করা। সেসব রক্ষায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয়, কিন্তু এগুলো ইউক্রেনের ড্রোন হামলাকে প্রতিরোধ করতে পারেনি। এ ছাড়া বেলায়া এয়ার বেসে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কৌশলগত এই বিমান ঘাঁটি থেকে কালো ধোঁয়া এবং কালির মেঘ উঠছে।
এ ধরনের ক্ষয়ক্ষতিতে তাৎক্ষণিক প্রভাব অনুভূত হবে রাশিয়ায়। কিয়েভের কর্মকর্তারা মনে করেন, তারা রাশিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান বিমান সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এসব বিমান দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অভিযান মস্কোর ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে বোমা বর্ষণের কৌশলকে জটিল করে তুলবে। রাশিয়া তার তুপোলেভ বোমারু বিমানগুলোর উপর নির্ভর করে। যেগুলো হাজার হাজার মাইল উড়তে পারে এবং পারমাণবিক বা প্রচলিত ওয়ারহেড বহন করতে পারে। বড় আকারের ক্রুজ মিসাইল হামলা চালানোর জন্যও এসব বিমান ব্যবহার করা যায়।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি অ্যানালিসিসের মিসাইল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফ্যাবিয়ান হফম্যানের মতে, মস্কোর পক্ষে আগের নিয়মে হামলা করা কঠিন হবে; যদি তারা তাদের কৌশলগত বোমারু বিমানের উল্লেখযোগ্য সংখ্যা হারায়।
যুদ্ধে আপনার এমন বড় বোমারু বিমান প্রয়োজন যা একাধিক ক্রুজ মিসাইল বহন করতে পারে। যদি সে বোমারু বিমানগুলো ধ্বংস হয়, তাহলে ইউক্রেনে রাশিয়ার বড় ধরনের হামলা চালানোর ক্ষমতাকে সত্যিই সীমিত করেছে।
রাশিয়ার কাছে তুলনামূলকভাবে কম কৌশলগত বোমারু বিমান রয়েছে। বেশিরভাগ স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই সংখ্যা ৯০-টির বেশি নয়।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা সোমবার বলেছেন, তাদের কোয়াডকপ্টার ড্রোনের সেনাবাহিনী ১৩-টি রুশ বিমান ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে ১২-টি কৌশলগত বোমারু বিমান। আরও দুই ডজন বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যদিও কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনো অজানা।
মঙ্গলবার মার্কিন এবং ইউরোপীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, রাশিয়ার প্রায় ২০-টি মূল্যবান কৌশলগত বোমারু বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪১-সালের ৭ই-ডিসেম্বর হাওয়াই দ্বীপের পার্ল হারবার নৌঘাঁটিতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় জাপানিরা। মার্কিন এই নৌঘাঁটিতে হামলায় প্রাণ যায় প্রায় ২-হাজার মানুষের। এর পরদিনই মার্কিন প্রশাসন জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র।
পার্ল হারবারের ওই হামলা যুদ্ধের গতি বদলে দেয়। মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিত্র শক্তির নতুন নতুন কৌশলে পর্যুদস্ত হয় জাপান ও তার মিত্ররা।
আজকের বিডি নিউজ২৪/ জাকারিয়া /
আপনার মতামত লিখুন :