তিন স্প্যানিশের হজযাত্রা, ৭ মাসে ঘোড়ায় চড়ে মক্কায়


আজকের বিডি নিউজ২৪ প্রকাশের সময় : জুন ৪, ২০২৫,

নিউজ ডেস্ক :

লাখো মুসলমান যখন হজের মৌসুমে আকাশপথে কিংবা স্থলপথে পবিত্র মক্কায় পৌঁছাচ্ছেন, ঠিক তখনই তিন স্প্যানিশ মুসলিম পাড়ি দিয়েছেন ৬,৫০০-কিলোমিটার পথ-তাও আবার ঘোড়ায় চড়ে! সাত মাসের দীর্ঘ, ক্লান্তিকর ও চ্যালেঞ্জিং এই যাত্রা শুধু হজ পালনের উদ্দেশ্যে নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক পথ পুনরুজ্জীবনের প্রয়াসও বটে।

বুধবার (৪ঠা-জুন) আমিরাত-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

দক্ষিণ স্পেনের আন্দালুসিয়ার আলমোনাস্তার লা রিয়ালের একটি প্রাচীন মসজিদ থেকে ২০২৪-সালের অক্টোবরে যাত্রা শুরু করেন আবদেলকাদির হারকাসি আইদি, তারেক রদ্রিগেজ ও আবদাল্লাহ রাফায়েল হেরনান্দেজ মানচা। যাত্রায় আরও একজন সঙ্গী ছিলেন-মোহাম্মদ মেসবাহি, যিনি যাত্রার শুরুতেই ঘোড়ার স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে পথ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

এই যাত্রাপথটি আন্দালুসীয় মুসলমানদের জন্য প্রায় ৫০০-বছরের পুরোনো। হেরনান্দেজ মানচা, যিনি একজন ইতিহাসের শিক্ষক এবং ৩৬-বছর আগে ইসলাম গ্রহণের অঙ্গীকার করেছিলেন, এই যাত্রার মাধ্যমে তার সেই প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়ন করেছেন।

ঘোড়া চালানোর প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক প্রস্তুতি-সব মিলিয়ে প্রায় চার বছর লেগেছে তাদের এই যাত্রার জন্য প্রস্তুত হতে। খুজেস্তানি জাতের ঘোড়া সংগ্রহ করে তারা যাত্রার সময় প্রতিদিন গড়ে ৪০-কিলোমিটার অতিক্রম করতেন। নিজেরাই রান্না করতেন, রাতে ঘুমাতেন তাবুতে। অর্থ সংকটে পড়লে বিভিন্ন দেশের মানুষের সহানুভূতির ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।

ফ্রান্স ও ইতালিতে তারা বিভিন্ন ইকুয়েস্ট্রিয়ান সেন্টারে আশ্রয় নেন। ইতালির ভারোনায় সৌদি ইনফ্লুয়েন্সার আবদুর রহমান আল-মুতাইরির দেয়া ক্যারাভান তাদের কষ্ট লাঘবে বিশেষ সহায়তা করে। বসনিয়া, সারায়েভো, তুরস্ক- প্রতিটি দেশেই তারা পেয়েছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের উষ্ণ আতিথেয়তা। সার্বিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত শহর নোভি পাজারেও তারা খুঁজে পান ভ্রাতৃত্বের বন্ধন।

তুরস্কে ঢোকার পর তারা ফিরে পান নিজেদের ঘোড়া, ঠিক তখনই শুরু হয় পবিত্র রমজান। রোজা রেখে তারা পথ চলেছেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে ইফতার ভাগাভাগি করেছেন।

সিরিয়া, জেরুজালেম ও জর্ডান হয়ে তারা সৌদি আরবে প্রবেশ করেন। প্রশাসনিক কিছু জটিলতার কারণে ঘোড়াগুলো রিয়াদে রেখে মদিনায় যেতে বলা হয়। সৌদি সরকার তাদের জন্য ফ্লাইট ও আতিথেয়তার ব্যবস্থা করে। মদিনা থেকে তারা অবশেষে মক্কায় পৌঁছান এবং হজের প্রস্তুতি নেন।

আবদেলকাদির হারকাসি আইদি বলেন, এটা ছিল অসম্ভব এক যাত্রা, যা আল্লাহর ইচ্ছাতেই সম্ভব হয়েছে। আমরা শুধু হজ করতেই আসিনি, বরং স্প্যানিশ মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করতেও এসেছি।

তবে এই যাত্রার শেষটা একটু বিষণ্ন। ঘোড়াগুলো তাদের সঙ্গে ফিরবে না। যেহেতু দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি ও প্রশাসনিক নিয়মকানুনের কারণে তা সম্ভব নয়, তাই ঘোড়াগুলোর জন্য উন্নত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এই তিন সাহসী যাত্রীর কাহিনি কেবল একটি ব্যতিক্রমী হজযাত্রা নয়-বরং ইতিহাস, বিশ্বাস, ত্যাগ আর মানবিক সংহতির এক অনবদ্য নিদর্শন।

আজকের বিডি নিউজ২৪/ জাকারিয়া /