পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ ও ঘনবসতিপূর্ণ শহর করাচি গত ২৪-ঘণ্টায় তিনবার মৃদু ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে। প্রথম ভূমিকম্পটি অনুভূত হয় রোববার বিকেলে এবং সর্বশেষটি সোমবার সকালে। প্রতিটি কম্পনই ছিল নিম্নমাত্রার, তবে ভূমিকম্পের ঘনঘন পুনরাবৃত্তি নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ ও আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে। খবর ডন-এর।
পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তর (পিএমডি) জানিয়েছে, সোমবার সকালে অনুভূত হওয়া সর্বশেষ ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৩.২। এর উপকেন্দ্র ছিল করাচির ঘনবসতিপূর্ণ কায়েদাবাদ এলাকা। ঠিক একদিন আগেই, রোববার বিকেল ৫-টা ৩৩-মিনিটে একই এলাকায় ৩.৬-মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল।
এই দুটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০-কিলোমিটার গভীরে। ভূপৃষ্ঠের এত কাছ থেকে কম্পন শুরু হওয়ায় ভূমিকম্পগুলো স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়, বিশেষ করে বহুতল ভবনে।
এছাড়া রোববার দিবাগত রাত ১-টা ৫-মিনিটে করাচির গাদাপ টাউনের আশপাশে আরেকটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। সেটির মাত্রাও ছিল ৩.২-এবং উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২-কিলোমিটার গভীরে। তবে এসব ভূমিকম্পে এখনো কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
আবহাওয়া অফিসের করাচি শাখার প্রধান আবহাওয়াবিদ আমির হায়দার বলেছেন, এসব ভূমিকম্পের উৎস করাচির লান্ধি অঞ্চলের একটি সক্রিয় ফল্ট লাইন। তিনি জানান, ভূমিকম্পের তীব্রতা আপাতত উদ্বেগজনক নয় এবং ক্রমশ কমে আসছে। তবে এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কবে এগুলো থামবে।
তার ভাষায়, ‘আমরা এখনো নির্দিষ্ট কোনো পূর্বাভাস দিতে পারি না, তবে বর্তমান ধারা অনুযায়ী অনুমান করা যায়, এই কম্পনগুলো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ভূতাত্ত্বিকদের একাংশের মতে, এ ধরনের ক্ষুদ্র ভূমিকম্প অনেক সময় বৃহৎ ভূমিকম্প প্রতিরোধেও সহায়ক হতে পারে। কারণ এগুলো ধারাবাহিকভাবে ভূত্বকের টেকটোনিক প্লেটের সঞ্চিত শক্তি মুক্ত করে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ এটাও বলেন, একটানা ক্ষুদ্র ভূকম্পন বড় একটি ভূমিকম্পের পূর্বাভাসও হতে পারে।
ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানে রেকর্ড করা হয় ২০-টিরও বেশি নিম্নমাত্রার ভূমিকম্প, যা গড়ে প্রতিদিন একটি করে। এপ্রিল মাসেও খাইবার পাখতুনখাওয়া ও পাঞ্জাবের রাজধানী শহরসমূহ-পেশোয়ার, ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি এবং লাহোর-এ ভূকম্পন অনুভূত হয়।
পাকিস্তানের ভূগঠনগত অবস্থান এ ধরনের ভূকম্পনপ্রবণতা ব্যাখ্যা করে। ভূতত্ত্ববিদ ও প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেহান বলেন, ‘পাকিস্তান ৩-টি প্রধান টেকটোনিক প্লেটের সীমানায় অবস্থিত-আরবীয়, ইউরো-এশীয় এবং ভারতীয় প্লেট। এই মিলনস্থলে ৫-টি প্রধান সিসমিক (ভূকম্পন) জোন গড়ে উঠেছে, যার কারণে এ অঞ্চলে ভূমিকম্প একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
তিনি জানান, করাচি মূলত দ্বিতীয় শ্রেণির ভূকম্পন ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পড়ে, তবে লান্ধি, মালির, গাদাপ ও কায়েদাবাদ অঞ্চলে ফল্ট লাইনের সক্রিয়তার কারণে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
ভূমিকম্পগুলোর মাত্রা কম হলেও করাচির বিভিন্ন এলাকায় মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে চলে আসেন। অনেকে আবার রাতেও জেগে ছিলেন, যাতে ভূকম্পন হলে দ্রুত ঘর ছেড়ে নিরাপদে যেতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাগরিকদের এখনই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকতে হবে। পুরনো ও দুর্বল ভবনে বসবাসকারীদের দ্রুত ঝুঁকিমুক্ত স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
করাচি নগর করপোরেশন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে আগাম সতর্কতা ও জরুরি প্রস্তুতি নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আজকের বিডি নিউজ২৪/ জাকারিয়া /
আপনার মতামত লিখুন :