এত টা কেমনে নিবা কাফনে তো পকেট নাই


আজকের বিডি নিউজ২৪ প্রকাশের সময় : জুলাই ১১, ২০২৪,

অফিস ডেস্ক :

আমরা বাস্তব জীবনে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে গিয়ে দেখি তিন ধরনের মানুষ দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকতে চেষ্টা করেন। প্রথমপক্ষ, যারা প্রকৃত অর্থেই ধার্মিক, আল্লাহভিরু এবং পরকালকে ভয় পান তাঁরা দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন।

অন্য এক ধরনের দূনীর্তিমুক্ত কর্মকতা দেখেছি যাঁরা ধর্মকর্মে বিশ্বাস না করলেও বিবেকবোধ এবং নৈতিকতার কারণে ঘুষ থেকে দূরে থাকেন। যাঁরা অতীতে অনেকে বাম ঘরনার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বিশেষভাবে বলা যায় কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এ ধারার অনেক সৎ কর্মকতা, সংসদ সদস্য, মন্ত্রীও অতীতে আমরা পেয়েছি।

তৃতীয় আর একটি শ্রেণিকে দেখেছি এবং দেখা যায়, যাঁদের পূর্বপুরুষ সৎ ছিলেন এবং যাঁদের শরীরে সৎ জিন প্রবাহিত। এ জন্য আমরা অনেক গরীব মানুষ কিংবা ভিক্ষুককে সততার জন্য পত্রিকার শিরোনাম হতে দেখি, যারা পাঁচ/দশ লক্ষ টাকা রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েও প্রকৃত মালিককে খুঁজে টাকা ফেরত দেন কিংবা পুলিশের দারস্হ হন। এ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সরকারি অফিসেও পাওয়া যায়।

তবে তীব্র সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে সব শ্রেণিতেই সৎ লোকের সংখ্যা কমছে যা সহজেই অনুমেয়। তাই তো দেখি সরকারি অনেক অফিসে জামাতে নামাজ আদায় করেই ঘুষের তালা নিয়ে বসে যান।

টিআইবির রিপোর্টে সরকারের অন্য বাহিনীর দুর্নীতি কর্তৃক জনগণ বেশী নিগৃহীত হওয়ার তথ্য উঠে এলেও আমার ধারণা একক কর্মকর্তা ও কর্মচারী হিসাবে দুর্নীতির মাধ্যমে টাকার পরিমাণে বেশি আয় করেন যাঁরা সরকারের রাজস্ব আদায়ে জড়িত। আপনি একটি জমি রেজিস্ট্রি করতে যাবেন করের সাথে দশ শতাংশ টাকা বেশী দিচ্ছেন এবং কীসের টাকা জিজ্ঞাসা করলেই উত্তর পাবেন .. অফিস খরচের টাকা..।

আয়কর বিভাগে আপনি সব সম্পত্তি যখন সাদা করে ফাইলে দেখাবেন তখন বছর বছর ওই ফাইল নিয়ে অডিট হবে এবং উপর-নীচ করবে। কারণ জিজ্ঞাসা করলে উত্তর আসবে.. বড় ফাইল একটু ভালোভাবে দেখতে হবে..। কিন্তু কর্মকর্তাকে বসে আনতে পারলে সমস্যা নেই।

যখন ঘুসখোর কোন কর্মকতার সামনে আপনার আমদানি পণ্যের ফাইলটা গেল তখন কোন খুঁত ধরতে না পারলেও লিখে দিলেন.. পণ্য পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে রির্পোট দিন..। পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে কদিন লাগবে, রিপোর্ট ভুল -শুদ্ধ কি আসে ব্যবসায়ী বড় টেনশনে পরে গেলেন। অন্যদিকে দিনে ৫/১০ হাজার টাকা নানা চার্জ বাড়ছে। এখন ব্যবসায়ীর একমাত্র উপায় হল কর্মকর্তকে বসে আনা।

যারা বলেন ঘুষ দেওয়া-নেওয়া সমান অপরাধ, তারা ঘুষখোরদের সম্মুখীন হয়েছেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। যে সমস্ত পয়েন্টে সরকারের রাজস্ব আদায় হচ্ছে সেই অফিস গুলোর বেশির ভাগ কর্মকতা ও কর্মচারীদের টেবিলের ড্রয়ার খুললেই লাখ লাখ টাকা পাওয়া যাবে বলে অমার দৃঢ় বিশ্বাস। (তবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও যারা সৎ ভাবে সেবা দিচ্ছেন তাদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা)।

একজন কর্মকর্তা যদি শত কোটি টাকা আয় করেন তবে ওই কর্মকতা সরকারের আনুমানিক ৪/৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিতে সহায়তা করেছেন। এ বিভাগগুলোর প্রায় সব শীর্ষ কমকতারা অবসরের সময় শত কোটি টাকার মালিক হন। যা অঘোষিত, সবাই জানে। কে ধরবে ? কেনই বা ধরবে? রাজনীতিবিদরা যদি এক দু’বার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হয়ে পাঁচ শত/ হাজার কোটি টাকার নিচে চাপা পড়েন এবং বার বার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হন, তাহলে সরকারি চাকুরেরা কেন বাদ যাবেন! তাঁরা তো রাজনীতিবিদদের অধীনে কাজ করছেন।

এ প্রসঙ্গে আলাপে অনেকে বলেন, সরকারের গণভিওি কমে যাওয়ায় সরকার চাকুরেদের তোয়াজ করে চলে। কিন্তু দূনীর্তিকে প্রশ্রয় দিলে তো গণভিওি আরও কমে যাবে। যাঁদের ক্ষমতা আছে তারা যদি দুর্নীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন না হন তবে ভুক্তভোগী জনগণের কী বা করার থাকে অল্লাহর উপর নির্ভর করা ছড়া।

তাই দুর্নীতিবাজ চাকুরেদের প্রতি অনুরোধ, “এক জীবনে কত টাকা প্রয়োজন? টাকা নিতে নিতে তো চুলে পাক ধরেছে, কয়দিন পরই অবসরে যাবেন। ঘুষখোরকে নিজের সন্তানরাও সম্মান করে না। যে সুযোগ পেয়েছেন তা জনগণের সেবায় কাজে লাগান, মানসিক প্রশান্তি উপভোগ করুণ। মনে রাখবেন কাফনের কাপড়ে কোন পকেট নাই।

আজকের বিডি নিউজ২৪/ জাকারিয়া /